শাখা সমূহ

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র

সঞ্চালন লাইন নির্মাণে দেরি যে কারণে

ভারত থেকে ঋণের অর্থ ছাড় ও ঠিকাদার নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। এ জন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদের চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল।

ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) চুক্তির আওতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ হচ্ছে। এলওসির বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করতে দেড় বছরের বেশি সময় লেগে গেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গতকাল বুধবার সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতি নিয়ে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ করছে দেশের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিবি)।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রূপপুরের গ্রিড সংযোগ ও সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতি জানতে চেয়েছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পিজিসিবির পক্ষ থেকে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাক্যুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালক কিউ এম শফিকুল ইসলাম সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হাজির হন। এতে তিনি সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন পায়। মোট ১০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকার মধ্যে ৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও পিজিসিবি। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু অর্থায়নের বিষয়ে ভারত সরকারের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া যায় ২০১৯ সালের ২৬ মে। মূলত তখন থেকেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংক থেকে ঠিকাদারের সংক্ষিপ্ত তালিকা ও দরপত্রের দলিলাদি চূড়ান্ত করতে প্রায় ২৪০ দিন লেগেছে। এ জন্য ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়।

প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভারত সরকার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ২০১৯ সালের ২৬ মে। এতে এক বছর সময় গেছে। এরপর ঠিকাদারের সংক্ষিপ্ত তালিকা দিতে দেরি করে এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের শুরুতে একটা দেরি হয়েছে। এ ছাড়া কোভিডের সময় দরপত্র জমা দেওয়ার তারিখ বারবার পেছাতে হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতটি প্যাকেজে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে রূপপুর-বাঘাবাড়ী পর্যন্ত ৬৫ দশমিক ৩১ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজের অগ্রগতি শতভাগ। আমিনবাজার থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার নির্মাণকাজের অগ্রগতি প্রায় ৮২ শতাংশ। রূপপুর থেকে ঢাকা (আমিনবাজার-কালিয়াকৈর) ১৪৭ কিলোমিটার নির্মাণকাজ হয়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ১৪৪ কিলোমিটারের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ, ধামরাই পর্যন্ত ১৪৫ কিলোমিটারের অগ্রগতি ৪১ শতাংশ, বগুড়া পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটারে অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ এবং নয়টি বে এক্সটেনশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সবচেয়ে কম অগ্রগতি হয়েছে নদীর সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজে। এ প্যাকেজে যমুনা ও পদ্মা নদীতে ৪০০ ও ২৩০ কেভির ১৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে যমুনা নদীর ওপর সাত কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। আর পদ্মা নদীতে হবে দুই কিলোমিটার লাইন। এ কাজের অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। নদীর সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ এ প্রকল্প থেকে অবমুক্ত করে সরকারের অর্থায়নে স্কিমভুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গত ১৭ আগস্ট ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

নদীতে লাইন নির্মাণে কম অগ্রগতির কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, এটি প্রথমে এলওসি চুক্তিতে ছিল। এক্সিম ব্যাংকের ঠিকাদারের দরপ্রস্তাব চার-পাঁচ গুণ বেশি ছিল।

তাই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রস্তাব ‘না’ করে দিয়েছে। পরে সরকারের অর্থায়নে এটি করার সিদ্ধান্ত হয়। ভূমি এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে লাইন আগামী বছরের মধ্যে নির্মিত হবে। একইভাবে যমুনা নদীর ওপর লাইন নির্মাণের কাজ চলবে। সেটি ২০২৪ সাল নাগাদ শেষ হয়ে যাবে।

গতকাল বৈঠক শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সঞ্চালন লাইন নিয়ে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। পিজিসিবিকে তাদের কাজ আরও গতিশীল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Comments

    Report

    Please Select a problem
    If someone is in immediate danger, get help before reporting to us. Don't wait.