শাখা সমূহ

২৩ বছর, ১৩ বিশ্বকাপ পর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে এই প্রথম

মাস তিনেক আগেও এভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করতেন অনেকে। প্রতিবছরই যেন একটি করে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ, কখনো তো এক বছরে দুবারও। রসিকতাও করতেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ যদি ছন্দ হারিয়ে বিবর্ণও থাকে মাঠে, জিম্বাবুয়েকে সামনে পেলেই যেন ছন্দ ফিরে পায়। নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকা ব্যাটসম্যান-বোলাররাও পেয়ে যান স্বরূপে ফেরার মোক্ষম সুযোগ।

ছন্দ হারালেই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজ খেলা আর বাংলাদেশের ‘বাঘ’ হয়ে ওঠা—তিন মাস আগেও উচ্চারিত হওয়া এসব রসিকতা আর বিরক্তির আবহ এখন পাল্টে গেছে। জুলাই-আগস্টে হারারেতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি—দুটি সিরিজেই জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দল ছন্দে নেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও।

বিপরীতে প্রথম রাউন্ড খেলে আসা জিম্বাবুয়ে আছে নবজাগরণের আনন্দে। এমন সময়েই কিনা বাংলাদেশের সামনে আবার জিম্বাবুয়ে। তাহলে কি আরেকবার ছন্দ হারিয়ে নিজেদের খুঁজতে থাকা বাংলাদেশ জেগে উঠবে? সাকিবরা ফিরে পাবেন ছন্দ, বাঘের গর্জন শুনবে বিশ্ব?

এমনিতে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি সিরিজ জিতেছে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে। আর বিশ্বকাপেও উড়ছে ক্রেগ আরভিনের দল।

 সুপার টুয়েলভে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে ১ রানে। সুপার টুয়েলভে গ্রুপ ২-এর সমীকরণ এখন এমন যে সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগও আছে আরভিনদের। সব মিলিয়ে জিম্বাবুইয়ানদের আত্মবিশ্বাসের পালে তুমুল বাতাসই লেগেছে!

অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারালেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে। সাকিবদের আত্মবিশ্বাস এখন অনেকটাই তলানির দিকে। এ ছাড়া সাক্ষাৎটা যখন বিশ্বমঞ্চে, এখানে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ কেমন খেলবে বা কী করবে, সেটা আগেই বলা মুশকিল! কারণ, বিশ্বমঞ্চে যে দুই দলের প্রথম দেখা হবে এবারই।

হ্যাঁ, প্রথমই। ১৯৯৭ থেকে ২০২২—২৫ বছর ধরে একে অপরের বিপক্ষে খেলছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে। দীর্ঘ এ সময়ে বাংলাদেশ দল সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টিও। কিন্তু বিশ্বকাপে মুখোমুখি? একবারও হয়নি।

আফ্রিকান দেশটির বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ১৯৯৭ সালে, কেনিয়ায় হওয়া প্রেসিডেন্টস কাপে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৮১ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। বাংলাদেশ যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কত বেশি খেলেছে, সেটি বোঝা যাবে বাংলাদেশের অন্য প্রতিপক্ষের দিকে তাকালে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, ৫১টি। অন্য দলগুলোর বিপক্ষে তো জিম্বাবুয়ের অর্ধেকের কম খেলেছে—তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেক ১৯৯৯ সালে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের প্রথম দেখার পর এখন পর্যন্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়েছে ছয়টি। ২০১৯ সালে হওয়া সর্বশেষ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে খেলেনি। বাকি পাঁচ আসরের কোনোটিতেই একবারের জন্যও দুই দলের দেখা হয়নি।

একই কাণ্ড টি-টোয়েন্টিতেও। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর চলছে। আগের সাত আসরের মধ্যে ২০০৯ ও ২০২১ আসর খেলেনি জিম্বাবুয়ে। বাকি পাঁচটিতে খেললেও বাংলাদেশের সঙ্গে দেখা হয়নি। অথচ ২০০৬ থেকে বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ১৯ বার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। জিম্বাবুয়ের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ টি-টোয়েন্টি খেলেছে কিউইদের বিপক্ষে।

প্রতিনিয়ত দেখা হওয়ার পর এখনো বিশ্বকাপে ‘অচেনা’ দুই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপে অভিষেকের পর কেটে গেছে ২৩ বছর, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে হয়েছে ১৩টি বিশ্বকাপ। এতটা বছর আর এতগুলো আসর পেরিয়ে এবারই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে।

কে জানে, প্রথম দেখায় বিজয়ীর বেশে কোন দল মাঠ ছাড়বে!

Comments

    Report

    Please Select a problem
    If someone is in immediate danger, get help before reporting to us. Don't wait.