শাখা সমূহ

ইউক্রেনে অস্ত্রসহায়তা: পিছিয়ে আসবে কি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য

ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহকারী প্রধান দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দুটি দেশেই রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলের কারণে অস্ত্র সরবরাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ইউক্রেন যখন পাল্টা আঘাতে দখল করা অঞ্চল মুক্ত করছে, সে সময়েই এটা ঘটতে পারে। 

যুক্তরাজ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন ঋষি সুনাক। ভূকৌশলগত নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এরই মধ্যে তিনি সরকারি ব্যয় কমানোর অঙ্গীকারও করেছেন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৮ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচন। পরিস্থিতি যা, তাতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কংগ্রেস অথবা সিনেটে অথবা দুটিতেই নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন। তাঁর প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানরা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের শপথ করেছেন। এ দুটি বাস্তবতা ইউক্রেনে ভলোদিমির জেলেনস্কি সরকারের যুদ্ধ-সামর্থ্যকে ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যথাক্রমে কিয়েভের প্রথম ও দ্বিতীয় অস্ত্র সরবরাহকারী। ইউক্রেনকে অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম, যুক্তরাজ্য তৃতীয়।

ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অস্ত্র সরবরাহ যদি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে যায়, তাহলে নানা কারণে বেকায়দায় পড়া ভ্লাদিমির পুতিনের হাতেই খেলাটা তুলে দেওয়া হবে। সৈন্য, অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম খোয়া যাওয়ায় ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে পুতিনের বাহিনী এখন পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে।

কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি ইউক্রেনে কোন দেশ কত পরিমাণ অস্ত্র রপ্তানি করে, তার ওপর নজর রাখে। সংস্থাটি জানাচ্ছে, এ বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ২৭ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত সহায়তার পরিমাণ ৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ইউরো। এ সময়কালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেখানে পোল্যান্ডের একার হিস্যা ১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ইউরোর।

২৫ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাইডেনের ইউক্রেন নীতি দ্বিদলীয় চাপের মুখে’। তবে ডেমোক্র্যাটরা তাঁদের যোদ্ধা প্রেসিডেন্ট থেকে পেছনে পড়ে গেছেন আর রিপাবলিকানরা কঠোর ভাষায় তার নিন্দা জানাচ্ছেন। গত সপ্তাহে রিপাবলিকান পার্টির হাউস লিডার কেভিন মাকার্থি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, জনগণ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে প্রবেশ করতে চলেছে এবং তারা ইউক্রেনকে ব্ল্যাংক চেক লিখে দিতে চান না।’


ইউক্রেনকে মানবিক ও আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্র ২৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম, ৫ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাজ্য তৃতীয় এবং ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সর্বোপরি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য—দুই দেশই তাদের মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ২ শতাংশ অংশ কিয়েভকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই যুদ্ধের মূল খেলোয়াড় জেলেনস্কি ও পুতিন; বাইডেন ও সুনাক সবাই এই অঙ্ক নিয়ে নিশ্চিতভাবেই সচেতন। ইংরেজিভাষী জনগোষ্ঠীর দুই প্রধান নেতা বাইডেন ও সুনাক ২৫ অক্টোবর তাঁদের টেলিফোন সংলাপে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলাপকালে দুই নেতা দুই দেশের বিশেষ সম্পর্কের বিষয়ে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির মতো জটিল বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া দুই নেতা ইউক্রেন সহায়তার ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করার গুরুত্ব সম্পর্কে ও আগ্রাসনের জন্য রাশিয়াকে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে ইউক্রেনের প্রসঙ্গ নেই। যাহোক, সুনাক-জেলেনস্কির টেলিফোন সংলাপ প্রসঙ্গে ডাউনিং স্ট্রিটের পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সুনাক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন তাঁর সরকারের সময়েও একই রকম শক্তিশালী থাকবে।’

একটা বিষয় হচ্ছে বিবৃতি থেকে এখনো স্পষ্ট নয়, সরকারি ব্যয়ের হ্রাসের যে ঘোষণা সুনাক দিয়েছেন, তা থেকে ইউক্রেন সহায়তা কাটছাঁট হবে কি না। অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টকে কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন পাউন্ডের সরকারি ব্যয় কমানোর পথ খুঁজতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন আসন্ন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক কারণে একই ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা কিয়েভের প্রতি বাইডেনের ‘ব্ল্যাংক চেক’ বা নিঃশর্ত সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।

২৫ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাইডেনের ইউক্রেন নীতি দ্বিদলীয় চাপের মুখে’। তবে ডেমোক্র্যাটরা তাঁদের যোদ্ধা প্রেসিডেন্ট থেকে পেছনে পড়ে গেছেন আর রিপাবলিকানরা কঠোর ভাষায় তার নিন্দা জানাচ্ছেন। গত সপ্তাহে রিপাবলিকান পার্টির হাউস লিডার কেভিন মাকার্থি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, জনগণ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে প্রবেশ করতে চলেছে এবং তারা ইউক্রেনকে ব্ল্যাংক চেক লিখে দিতে চান না।’

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস–এর মতে, মাকার্থির এই মন্তব্য থেকে যে ইঙ্গিত মিলছে, তা হলো ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থনের ব্যাপারে যে সংশয়, তা শুধু পার্টির জাতীয়তাবাদী কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েনি। দলের মূলধারার নেতাদের মধ্যেও তা চলে এসেছে।

রাজনৈতিক পরিসরে এসব আলোচনা ও বদল যখন ঘটছে, ঠিক সে সময়ই কাকতালীয়ভাবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় গোলাবারুদের মজুত ফুরিয়ে আসার অনেকগুলো খবর বের হচ্ছে। যদিও এসব খবর অতিরঞ্জিত বলেই মনে হয়।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন জ্বালানি যুদ্ধের সূত্রপাত করেছেন। ইউক্রেনের জ্বালানি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র গুঁড়িয়ে দিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছেন। জ্বালানি নিয়ে সংকটে থাকা ইউরোপ যদি আসন্ন শীতে ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পুতিন ও তাঁর ভাঙা কপাল পুনরায় জীবন ফিরে পাবে। 

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

● আন্ড্রু সালমান দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক ও যুদ্ধবিষয়ক লেখক

সম্পর্কিত শব্দসমূহ

Comments

    Report

    Please Select a problem
    If someone is in immediate danger, get help before reporting to us. Don't wait.