শাখা সমূহ

সুপারফুড পেরিলার চাষ হচ্ছে দিনাজপুরে

দূর থেকে দেখে সবুজ কোনো শাকসবজির খেত মনে হয়েছিল। কাছে গিয়ে দেখা গেল, সারি সারি এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতার গাছ। পাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে সাদা রঙের ফুল। এই উদ্ভিদের নাম পেরিলা। এটি একটি ভোজ্য তেলবীজজাতীয় ফসল। এটি সুপারফুড হিসেবে পরিচিত।

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার নাফানগর এলাকায় ১২ একর জমিতে এর চাষ করছেন স্থানীয় যুবক সৈয়দ রোকনুজ্জামান। গত মৌসুমে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১০ একর জমি বর্গা নিয়ে প্রথমবারের মতো পেরিলার চাষ করেছিলেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরের শুরুতে ফসল সংগ্রহ করবেন। ১২ একর জমি থেকে প্রায় ২০০ মণ পেরিলা সংগ্রহের সম্ভাবনা দেখছেন রোকনুজ্জামান, যার বাজারমূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা। নতুন এ ফসলের খেত দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে আসছেন কৃষকেরা। তাঁরাও স্বপ্ন দেখছেন পেরিলা চাষের। 

১২ একর জমি থেকে ২০০ মণ পেরিলা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন রোকনুজ্জামান, যার বাজারমূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা।

রোকনুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায়। ২০১২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। একপর্যায়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৯ সালে এলাকায় ফিরে কৃষিকাজ শুরু করেন। সেই সঙ্গে অনলাইনে শুরু করেন ফলের ব্যবসা। 

রোকনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ওই বছরের শেষ দিকে ইন্টারনেট থেকে পেরিলার গুণাগুণ ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর সাক্ষাৎ করেন পেরিলা গবেষক আব্দুল কাইয়ুম মজুমদারের সঙ্গে। তাঁর পরামর্শেই পরের বছর তেঁতুলিয়ায় পেরিলার চাষ শুরু করেন। অভিজ্ঞতার অভাব ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেবার আশানুরূপ ফলন পাননি। তবে এবার ভালো ফসল পাবেন বলে আশা করছেন। 

এ বিষয়ে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দিনাজপুরের মাটি পেরিলা চাষের জন্য উপযোগী। পেরিলা অন্যান্য ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবেও চাষ করা যায়। চাষের খরচ কম, রোগবালাইও কম হয়। জেলায় প্রথমবারের মতো একজন এ ফসল চাষ করেছেন। তাঁর বিষয়ে কৃষি বিভাগ আশাবাদী। পর্যায়ক্রমে অন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করা হবে।

বলেন, বীজতলা থেকে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতি একরে (১০০ শতকে ১ একর) খরচ হবে ২০-২৫ হাজার টাকা। খেতের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় একরপ্রতি ১৬ মণ পর্যন্ত পেরিলা মাড়াই হবে। এ থেকে তেল উৎপাদন হবে প্রায় ১৮২ লিটার। 

আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সূর্যমুখী ও শর্ষের মতো পেরিলার বীজ থেকেও পাওয়া যায় ভোজ্যতেল। পেরিলা দেখতে অনেকটা শর্ষের বীজের মতো। সাধারণত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, নেপাল, ভিয়েতনাম ও ভারতের কিছু অঞ্চলে পেরিলার চাষ হয়। ২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় বীজ বোর্ডে নিবন্ধিত হয়ে দেশের ফসলের তালিকায় স্থান পেয়েছে এটি।

পেরিলা চাষে রোকনুজ্জামানকে উদ্বুদ্ধ করেছেন কোরিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা পারভেজ ইমতিয়াজও। তিনি কোরিয়ার একটি পেরিলা অয়েল কোম্পানিতে কাজ করেছেন। কিছুদিন হয় বাড়িতে এসেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে রোকনুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পারভেজ। 

সুপারফুড হিসেবে পরিচিত পেরিলার তেল হৃদ্‌যন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকের জন্য বেশ উপকারী জানিয়ে  আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার বলেন, ‘পেরিলার তেলের গুণগত মান অন্যান্য তেলের তুলনায় ভালো। এ তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দেশের ৬০টি জায়গায় পেরিলার চাষের পাইলটিং করা হয়েছে। পাঁচ বছর আগে কোরিয়া থেকে পেরিলার বীজ এনেছিলাম। এখন সেখানে নিজেদের বীজে নিজেরাই চাষাবাদ করছি।’

সম্পর্কিত শব্দসমূহ

Comments

    Report

    Please Select a problem
    If someone is in immediate danger, get help before reporting to us. Don't wait.