সামাজিক মাধ্যম সন্ত্রাসবাদীদের হাতিয়ার: জয়শঙ্কর
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, সভ্য সমাজের সবচেয়ে বড় হুমকি সন্ত্রাসবাদ। আর ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমগুলো হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের শক্তিশালী হাতিয়ার। সবাই মিলে এর মোকাবিলা জরুরি।
জয়শঙ্কর বলেন, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো ইদানীং প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী অপকর্মের বিস্তার ঘটাচ্ছে। স্বাধীনতা, সহনশীলতা ও উন্নয়নকে আক্রমণ করে ধর্মান্ধতা ও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রচার করতে তারা ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে। এগুলো হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের শক্তিশালী হাতিয়ার।
আজ শনিবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির বিশেষ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই প্রথম ভারতে তাদের সম্মেলনের আয়োজন করেছে। গত শুক্রবার এই বৈঠক বসেছিল মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে, যেখানে ২০০৮ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার জঙ্গিদের তাণ্ডবলীলায় ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছিলেন। একই সময়ে মুম্বাই শহরের অন্যত্র যে হামলা চলে তাতে মোট ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন তিন শতাধিক। শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির পূর্ণাঙ্গ বৈঠক বসে নয়াদিল্লিতে।
সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ফলপ্রসূ করতে জাতিসংঘের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ট্রাস্ট তহবিলে ভারত চলতি বছরের জন্য ৫ লাখ ডলার দেবে। জয়শঙ্কর তাঁর ভাষণে এই ঘোষণা করেন।
গত শুক্রবার সম্মেলনের প্রথম দিন জয়শঙ্কর পাকিস্তানের নাম না করে তাদের বিরুদ্ধে ২৬/১১ হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের আড়াল করার অভিযোগ এনেছিলেন। সন্ত্রাস দমনে জাতিসংঘের অপারগতা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, সন্ত্রাসে জড়িতদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে জাতিসংঘ এখনো প্রয়োজনীয় ও আবশ্যিক পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ। সামাজিক মাধ্যমগুলো যাতে সন্ত্রাসবাদীদের হাতিয়ার না হতে পারে, সে জন্য শনিবার নয়াদিল্লির সম্মেলনে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার ওপর জোর দেন।
গত শুক্রবারের সম্মেলনে ভারত তার এক আশঙ্কার কথাও প্রকাশ করেছে। বলেছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স বা ‘এফএটিএফ’ পাকিস্তানকে ‘ধূসর তালিকা’ (গ্রে লিস্ট) থেকে মুক্তি দেওয়ায় ভারতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সম্মেলনে জানানো হয়, গত চার বছর পাকিস্তান এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় থাকার সময় ভারতের সীমান্ত পার তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাসী ঘটনা কমে গিয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীরে সেনা ও আধা সেনা ছাউনিতে ২০১৪ সালে জঙ্গি হানা হয়েছিল ৫টি, ২০১৫ সালে ৮টি ও ২০১৬ তে ১৫টি। ২০১৭ তে সন্ত্রাসীদের অর্থ জোগানোর অভিযোগে পাকিস্তানকে ‘এফএটিএফ’ ধূসর তালিকাভুক্ত করে। সে বছর জঙ্গি হানার ঘটনাও কমে দাঁড়ায় ৮টিতে। পরের বছর ২০১৮ সালে ওই ধরনের ঘটনা ঘটে মাত্র ৩টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে পুলওয়ামার মতো ঘটনা ঘটেছিল ঠিকই। কিন্তু তার পরের বছর ছিল সন্ত্রাসী হামলামুক্ত। ভারতের আশঙ্কা, পাকিস্তানকে মুক্তি দেওয়ার ফলে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম ফের শুরু হতে পারে।
কাশ্মীর উপত্যকার নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এখনো নিশ্চিত হতে পারছে না। হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও উপত্যকার পণ্ডিতদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ও প্রশাসন ব্যর্থ। পণ্ডিত হত্যা অব্যাহত থাকায় সেখানকার মানুষ নিরাপত্তা বোধ করতে পারছে না। দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানের চৌধুরীকুণ্ড গ্রাম থেকে শেষ পণ্ডিত পরিবার গত শুক্রবার জম্মুতে চলে যায়। ১৫ অক্টোবর ওই গ্রামে পূরণ কিশোর ভাট নামের এক পণ্ডিতকে জঙ্গিরা হত্যা করে। ওই ঘটনার পর চৌধুরীগুন্ড ও ছোটিপুরা গ্রামে বসবাসকারী ১১ পণ্ডিত পরিবারের সবাই জম্মু চলে যান। একমাত্র টিকে ছিলেন ডলি কুমারী। গত শুক্রবার তিনি চলে যাওয়ার পর দুটি গ্রামই পণ্ডিতশূন্য। সরকারি ঘেরাটোপে আশ্রিত সরকারি পণ্ডিত কর্মীরা জম্মু বদলির দাবি জোরালো করেছেন। প্রাণে বাঁচতে তাঁদের অনেকে চাকরিও ছেড়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসক যদিও পরিস্থিতির উন্নতির দাবিতে তেমন কিছু করছেন না। গত শুক্রবার ভারতের সরকারি প্রতিবেদনে কাশ্মীর পরিস্থিতির ‘উন্নতি’ ও সন্ত্রাসবাদী হামলা কমার জন্য ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্তকেও কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে।
Comments