শাখা সমূহ

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে খাদ্যনিরাপত্তা

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলো বিপাকে পড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ইউরোপের বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সমস্যায় পড়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য ব্যাপক লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কারণ, এলএনজির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে এ জ্বালানি কিনতে পারছে না। বাংলাদেশের মতো অবস্থা পাকিস্তানেরও। 

গত বুধবার বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ কমোডিটি মার্কেট আউটলুক প্রকাশ করেছে। সেখানে বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বোঝাতে গিয়ে বাংলাদেশের এই উদাহরণ তুলে ধরা হয়।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার কারণে নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় জ্বালানি পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এতে আগামী শীতে ইউরোপে সংকট প্রকট হতে পারে। জ্বালানি পণ্যের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়ে গেলে তা খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বলেও মনে করছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংক বলছে, নিজ নিজ দেশের মুদ্রার মান অবমূল্যায়নের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে বহু দেশ বিপাকে পড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ শুরু হয়। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৯ শতাংশ পড়ে যায়। তারপরও স্থানীয় মুদ্রার মান অবমূল্যায়নের কারণে প্রায় ৬০ শতাংশ তেল আমদানিকারক উন্নয়নশীল দেশ স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে।


প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। চলতি বছরের তিন প্রান্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। বিশ্বের অন্য অঞ্চলেও এই প্রভাব পড়েছে। লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল, উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, সাব-সাহারা আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে আছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, আগামী বছর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চাপকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাবলো সাবেদ্রা বলেন, বহু নিত্যপণ্যের দাম বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। এ দাম গত কয়েক বছরের গড় মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় যদি আবারও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে, তাহলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্যনিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এ জন্য সরবরাহব্যবস্থা, বিতরণ, আয় বাড়ানোসহ বিভিন্ন খাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই জ্বালানি পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জ্বালানি পণ্যের দাম কমার অপেক্ষায় রয়েছে। জ্বালানি পণ্যের দাম ২০২২ সালে প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়ার পর আগামী বছরে তা কিছুটা কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালে জ্বালানি পণ্যের দাম গড়ে ১১ শতাংশ কমবে। যদি মাঝামাঝি পর্যায়ে দাম কমে, তাহলেও গত ৫ বছরের গড় দামের চেয়ে ৭৫ শতাংশ ওপরে থাকবে। বিশ্বব্যাংক আর বলছে, ২০২৩ সালে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৯২ ডলার হতে পারে। গত পাঁচ বছর এই ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের গড় দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার। প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার দাম ২০২২ সালে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছিল। আগামী বছরে এই দুটি পণ্যে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার কয়লা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত পাঁচ বছরের গড় দামের চেয়ে দ্বিগুণ থাকবে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২৩ সালে কৃষিপণ্যের দাম কমতে পারে ৫ শতাংশ। চলতি বছরের গত তিন প্রান্তিকে গমের দাম কমেছে ২০ শতাংশ। তবু তা গত এক বছর আগের দামের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে কৃষিপণ্যের দাম কমার পেছনে বেশ কিছু কারণের পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো গমের উৎপাদন বৃদ্ধি, চালের বাজারে সরবরাহব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা, ইউক্রেন থেকে আবার কৃষিপণ্য রপ্তানি শুরু হওয়া ইত্যাদি।

Comments

    Report

    Please Select a problem
    If someone is in immediate danger, get help before reporting to us. Don't wait.